Header Ads

Header ADS

সিটিজেনশিপ অফ সেলিব্রেটি সিটি

জগলুল মণ্ডল অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে ঝিম মেরে, আজ নিয়ে তার তৃতীয়বার ভিসা ইন্টারভিউ। সেলিব্রেটি সিটি’র সিটিজেনশিপ এর জন্য এর আগে দুবার আবেদন করে সে রিজেক্ট হয়েছে। প্রথমবার সে খুবই সিলি একটা মিসটেক করেছে, তার ফ্রেন্ডলিস্ট এর কোটা তখনো পূরণ হয় নাই, শখানেক কম ছিল। কিন্তু ইমিগ্রেশন নিয়ম মতে পুরো কোটা ফিলআপ করা ফ্রেন্ড থাকতে হবে। 

এর পরেরবার অবশ্য জগলুল মণ্ডলের কোন দোষ ছিল না, তার স্পন্সর ছিল যে সেলিব্রেটি সিটিজেন, সে শেষ মুহূর্তে তার স্পন্সর ক্যান্সেল করে নিয়েছে। তার অভিযোগ জগলুল নাকি কথামত লাইক-কমেণ্ট-শেয়ার জমা দিতে পারে নাই উনার একাউণ্টে। কিন্তু জগলুলের স্পষ্ট মনে আছে, উনার দাবী মত লাইক-কমেণ্ট-শেয়ার ঠিকই জমা দিয়েছিল। আসল ঘটনা হল, সে আরেক সেলিব্রেটি সিটিজেন কন্যার পারসোনাল মোবাইল নাম্বারটা যোগাড় করে দিতে পারে নাই উনাকে, তাই তো তার এহেন আচরণ। কিন্তু এবার জগলুল খুবই আশাবাদী, এবার সে সব দিক নিশ্চিত করে এসেছে। সেলিব্রেটি সিটির ইমিগ্রেশন আইনের সব কয়টা ধারা সে ফুলফিল করে, তাই এবার তার সিটিজেনশিপ প্রাপ্তি ঠেকায় কে?

কিছুক্ষণের মধ্যেই জগলুলের ডাক পড়ল ইমিগ্রেশন রুমে। সে কিছুটা নার্ভাস ফিল করছে, কারণ সেলিব্রেটি সিটির মেয়র, যার এক কোটির উপর ফ্যান ফলোয়ার আছে, আজ উনি ইন্টারভিউ নিচ্ছেন না। তার বদলে, সবচেয়ে হট সেলিব্রেটি কায়লা শেইম আজ ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। জগলুল মনে মনে ঢোক গিলল, এই সেলিব্রেটির অনলাইনে ছবি ভিডিও দেখেই জগলুল ঘামতে থাকে, আর এখন সামনে বসে কাঁপতে লাগলো। কি কি প্রশ্নে কি কি উত্তর দিল কিছুই বোঝা গেল না, শুধু শেষ প্রশ্নটা কানে গেল, “আমার লাস্ট পিকচারগুলোতে তোমার কোন কমেন্ট নাই কেন? আর ইনবক্সে আমাকে একদিনও সেলিব্রেটি সিটিজেনশিপের জন্য রিকুয়েস্ট কর নাই!!! নাহ বেব, এবার তোমাকে সেলিব্রেটি সিটিজেনশিপ দেয়া গেল না দুঃখিত। ট্রাই ফর নেক্সট টাইম”

জগলুল ইমিগ্রেশন রুম থেকে বের হয়ে মনে হল এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকাই অর্থহীন। তিনবার চেষ্টা করেও সে সেলিব্রেটি সিটিজেনশিপ পেল না, এই জীবন রেখে কি লাভ হবে। তাই দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার আগে সে একটা স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য মনস্থির করল। মনে মনে ভাবতে লাগলো, কি এমন লিখে স্ট্যাটাসটা দিলে লাইক-কমেণ্ট-শেয়ারে একটা রেকর্ড হয়ে যাবে। যাতে করে তার মৃত্যুর পরও মানুষ তাকে মনে রাখে। সেলিব্রেটি সিটি থেকে তাকে দেয়া হয় মরণোত্তর সিটিজেনশিপ। ভাবতেই জগলুল মণ্ডলের চোখ দুটো চকচক করতে লাগলো, চেহারায় খেলে গেল এক অদ্ভুত আত্মতৃপ্তির ছায়া।

No comments

Powered by Blogger.