Header Ads

Header ADS

সামলে রাখুন আপনার আবেগকে, ছিনতাই হতে পারে বেনিয়াদের হাতে।

ইদানীং একটি বিজ্ঞাপন ঈদ ও ঈদ পরবর্তী দিনগুলোতে চোখে পড়ল খুব বেশী, সেনোরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের। মানুষের মানবিক আবেগ নিয়ে ব্যাবসায়ি গোষ্ঠীর নিদারুন এক ব্ল্যাকমেইলিং এর অপচেষ্টা। বিজ্ঞাপনের মূল বক্তব্য হল, বাংলাদেশের বেশীরভাগ মেয়ে শিশুর এখনো বিয়ে হয়ে যায় ১৪ বছর বয়সে। আর এই অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে সেনোরা সুরক্ষা এবং আপনার সচেতনতা। এই বিজ্ঞাপন দেখে গত ঈদের সময়ে ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিমের সেই কোটি টাকা চ্যালেঞ্জের দেশীয় কোম্পানি সেজে দেয়া বিজ্ঞাপন দেখে যে প্রতিক্রিয়া হল, সেই একই প্রতিক্রিয়া হল এবারও। এক্সকিউজ মি, বাল্য বিবাহ বন্ধের সাথে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কি সম্পর্ক কেউ কি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন? থাক, আমি না হয় কিছু নিজেকে বুঝাই।

বাংলাদেশে বর্তমানে বিজ্ঞাপনের নামে চলছে প্রকাশ্যে মিথ্যাচার এবং এগুলো প্রতিদিন টেলিভিশন-রেডিও-পত্রপত্রিকা জুড়ে বিরামহীনভাবে চলছে। কোন সরকারী সংস্থা এগুলো দেখভালের জন্য আছে বলে মনে হয় না। মাস দুয়েক আগে একজন আইনজীবী ইউনিলিভারের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেছে, সোনার চেইন উপহার হিসেবে পাওয়ার লোভ দেখিয়ে পণ্য বিক্রির অভিযোগে এবং হাইকোর্ট এই বিপনন কৌশলের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু এরকম প্রতিটি দেশী বিদেশী কোম্পানি তাদের মার্কেটিং পলিসি মোতাবেক নানান মিথ্যাচারে ভরা বিজ্ঞাপন তৈরি করছে এবং তা প্রচারিত হচ্ছে সকল জায়গায়। বাংলাদেশে কি কোন বিজ্ঞাপন ছাড়পত্র দেয়ার সংস্থা আছে? মনে হয় না। আর তাইতো যার যা খুশী বিজ্ঞাপনে বলে যাচ্ছে।

দেশীয় কি বহুজাতিক, সব কোম্পানি আসলে মুনাফার লোভে ব্যাবসা করবে, এটাই স্বাভাবিক। আর জনগণের অভিভাবক হিসেবে সরকার তথা রাষ্ট্র এদের নিয়ন্ত্রণ করবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশে বেনিয়া কোম্পানিগুলো থোরাই কেয়ার করে কোন নিয়মকে। আর তাইতো প্রাণের পণ্য নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও আজ তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি কর্পোরেট হাউজ। বিএসটিআই নামের সংস্থাটি আসলে যে কি কাজে আছে তা খোদ তারা নিজেরাও জানে বলে মনে হয় না। রমজান মাসের অভিযান শেষে আমাদের কর্তা ব্যাক্তিরা এখন দীর্ঘ সময়ের জন্য চলে যাবেন শীত নিদ্রায়। আর এই সুযোগে আপনার আমার আবেগকে পুঁজি করে মুনাফা লুটবে লুটেরার দল।

তো প্রথমে যে কথা বলছিলাম, সেনোরার বিজ্ঞাপনে যেটা করা হয়েছে, সেটা হল আমার আপনার আবেগকে সুকৌশলে ব্যাবহার করা হয়েছে। “আমাগো মেয়ে স্কুলে যাবে” এই একটি স্লোগান হাইলাইট করে তারা আপনার আবেগকে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। খেয়াল করে দেখবেন, পুরো বিজ্ঞাপনে এই একটি লাইন আপনার মনের কোথাও না কোথাও বসে গেছে। কিন্তু একটু যৌক্তিক চিন্তা করে দেখুন বাল্যবিবাহ না দিয়ে স্কুলে যাবে আমাদের মেয়ে এটার সাথে তাদের ঐ পণ্যের কোন সম্পর্ক আছে কি? উত্তর না। তাহলে তারা এমন বিজ্ঞাপন কেন নির্মাণ করল? কারণ বর্তমানে আমাদের এই উপমহাদেশে যে বিপণন কৌশল কোম্পানিগুলো অবলম্বন করছে তা হল মানুষের আবেগকে ব্যাবহার করে তার পণ্য বিক্রি করা। 

মার্কেটিং এর বেসিক কনসেপ্ট হচ্ছে “ফোর পি” যা হচ্ছে প্রোডাক্ট, প্রাইস, প্লেস এবং প্রমোশন। আর বর্তমানে এই ফোর পি এর শুধুমাত্র প্রমোশন নিয়ে বেশী মনোযোগী কোম্পানিগুলো। কারণ, তারা জানে, উপমহাদেশে প্রোডাক্ট এর গুণমান যাই হোক না কেন, যে কোন প্রাইসে তা বিক্রয় করা সম্ভব যদি প্রপারলি তা প্রমোশন একটিভিটিজ দিয়ে কাস্টমার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। আর এই পৌঁছানোর জন্য তারা সুকৌশলে ব্যাবহার করছে আমাদের মানবিক আবেগের দিকটি। আপনার দেখা দশটি বিজ্ঞাপন নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন, দেখতে পাবেন ঘটনা কতটুকু সত্য। ঢেউটিনের বিজ্ঞাপনে মায়ের জন্য কিছু একটা করার আকুলতা যোগ করা হয়েছে। বন্ধু ছাড়া জীবন অচল এটা এখন সব মোবাইল অপারেটর কোম্পানির মূল কথা। আসলে উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না, এই ব্যাপারগুলো নিয়ে গত বছর লিখেছিলাম এই পোস্টটি প্রিন্টেড এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন - ETHICS!!! আর মিথ্যার বেসাতী এবং নির্লজ্জ প্রদর্শন। 

তাই আমি বলি কি, ভোক্তা হিসেবে একটু সামলে রাখুন আপনার আবেগটুকু। যখন কিছু ক্রয় করবেন এইসব মিথ্যার বেসাতি দ্বারা যেন আপনার কনজিউমার বিহেভিয়ার নিয়ন্ত্রিত না হয়। কারণ নিজের সম্ভ্রমের মতই দামী কিন্তু আমার আপনার আবেগ, তাই নিশ্চয়ই চাইবেন না এই আবেগ নিয়ে যে কাউকে খেলা করতে দিতে। আমাদের তো আর ক্ষমতা নেই সব কিছুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দ্বারস্থ হওয়া, আমরা শুধু পারি নিজেদের গণ্ডিতে সর্বোচ্চ প্রতিবাদ করতে। মিথ্যাচারের এইসব বিজ্ঞাপন দিয়ে যখন কোম্পানিগুলো দেখবে কোন লাভ হয় না, তখন হয়ত এদের এইসব মিথ্যাচার বন্ধ হবে। আদৌ হবে কি না, কে জানে? কিন্তু আমি আপনি সবসময় যেন সচেষ্ট থাকি, এই সব আবেগ নিয়ে খেলা মিথ্যাচার করা কোম্পানি এবং তাদের পণ্যগুলো নিয়ে। রঙিন আর হৃদয় ছোঁয়া বিজ্ঞাপন নয়, চাই মানসম্মত পণ্য যার মূল্য হবে যৌক্তিক এবং সহনীয়, যে পণ্যের মূল্যের এক চতুর্থাংশ থাকবে না এই মিথ্যাচার করার ক্যাম্পেইন খরচ তুলে নেয়ার জন্য। কম-বেশী সকল কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রাইসের একটি সিংহভাগ খরচ কিন্তু এইসব বিজ্ঞাপন নির্মাণ আর তার প্রচারের জন্য বরাদ্দ থাকে। তাই ভেবে দেখার সময় এসেছে আপনি আপনার টাকা দিয়ে আপনার আবেগকে ব্ল্যাকমেইল করতে দিবেন কি না? আর তার বিনিময়ে মানহীন, উচ্চমূল্যে কোন পণ্য নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য ক্রয় করবেন কি না? তাই শেষে বলি শুরুর কথা, “সামলে রাখুন আপনার আবেগকে, ছিনতাই হতে পারে বেনিয়াদের হাতে”। 

No comments

Powered by Blogger.