একটি ভুল স্বপ্ন..... যদি কভু সত্য হত......
বিশ্বকাপ ক্রিকেট এসে যেন প্রমাণ করে দিয়ে গেল আমরা আসলেই দেশের জন্য এক হতে জানি। কিন্তু এই আবেগ কি শুধু খেলার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে? কেন আমরা এর ব্যবহার করে দেশটাকে পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করি না? আসুন বদলে দেই দেশটাকে... বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ হয় মূলত অস্ত্রে নয়, অর্থে। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হতে পারলে যে কোন দেশ, যে কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে বহুদূর। কিন্তু ব্যক্তি আমি, আপনি বা আমরা কিই বা করতে পারি? আসলেই কি কিছু করতে পারি না? আসুন না দেখি এমন করা যায় কি না? মনে করুন এটা একবিংশ শতাব্দীর স্বদেশী আন্দোলন।
আমার,আপনার একদিনের জীবনে এই পরিবর্তনগুলো কি করা যেতে পারে না?
• শুরু করি ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে। প্রথমেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথম যে ভোগপণ্যটি আমরা কমবেশী সবাই ব্যবহার করি তা হল টুথপেস্ট। আসুন ক্লোজআপ, পেপসোডেন্ট, কলগেট ইত্যাদি বিদেশী ব্র্যান্ড ত্যাগ করে দেশীয় হোয়াইট প্লাস, কোহিনুর কেমিক্যাল এর এএম-পিএম, ম্যাজিক টুথ পাউডার ইত্যাদি। সাথে ব্রাশটা হতে পারে ম্যাটাডোর বা অন্য কোন কোম্পানির।
• মুখটা মোছার জন্য ব্যবহার করি গ্রাম বাংলার তাঁতের তৈরি গামছা। এতে এই অবহেলিত শিল্পটি ঘুরে দাঁড়াবে।
• এবার নাস্তার টেবিলে বসতে হবে তাই না? নাকি তার আগে চা পান করার অভ্যেস আছে? তাহলে লিপটন বা বিদেশী কোন চা পাতা বা কফি বাদ দিয়ে আমাদের দেশীয় কোন ব্র্যান্ডের চাপাতা ব্যবহার করি, কি বলেন?
• লাল মোটা চালের ভাত, অথবা লাল আটা আজকের দিনে অর্গানিক ভ্যালু রাখে খুব বেশী। জানি, চাল বা গমের জন্য আমরা অনেক সময়ই আমদানি নির্ভর হয়ে থাকি। কিন্তু আমি, আপনি যদি সচেষ্ট হই, সবাই যদি উদ্যোগী হই, যদি আমাদের চাষিদের ন্যায্য মূল্য আমরা দিতে পারি, তবে অবশ্যই এই আমদানি নির্ভরতা কমে গিয়ে একদিন উদ্বৃত্ত পণ্য আমরা রপ্তানি করতে পারব ইনশাল্লাহ।
• আমাদের পরিধানের জামাটা যদি দেশীয় কাপড়ের হয় তবে কি খুব খারাপ হয়। আজকের দিনে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো কিন্তু ভাল এবং মানসম্মত, রুচিশীল জামাকাপড় তৈরি করছে। আমরা যদি এদের ঠিকমত মূল্যায়ন করতে পারি, একদিন আমাদের আর বিদেশী ব্র্যান্ডের পেছনে ছুটতে হবে না।
• ছেলেরা, যারা শেভ করেন, দেশীয় শেভিং পণ্য কি খুব বেশী খারাপ। যদি না হয়, তবে তা ব্যবহার করে দেখেতে পারেন। দেশের জন্য একটু না হয় সেক্রিফাইস করলেন। আর মেয়েরা, প্রসাধনী’র ক্ষেত্রে কোন বহুজাতিক কোম্পানির পণ্য ক্রয় না করে যতটুকু সম্ভব দেশীয় পণ্য ব্যবহার করুন। আর কসমেটিকস এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে জাফরুল মবীন ভাইয়ের পোস্টগুলোর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে।
• পায়ের জুতো বাটা’র না হয়ে যে কোন দেশীয় ব্র্যান্ড হলে ভালো হয়। দেশে অনেক ভালো চামড়া শিল্প রয়েছে, যাদের পণ্য চলে যায় বাইরে, আমরা কিনি বহুজাতিক কোম্পানির পণ্য!!!
• এভাবে চলুক সারাদিন, শেষে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চলুক। মরটিন নয়, চলুক দেশীয় অন্য কোন প্রোডাক্ট। কিছু না পেলে আগের দিনের ধূপ!!!
এভাবে আপনার আমার প্রতি দিনের হাজারো ব্যবহার্য পণ্য দিয়ে যদি আমরা শুরু করি, প্রতিজ্ঞা করি আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, আমাদের দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে। একটু না হয় ছাড় দিলাম দেশীয় কোম্পানিগুলোকে... তাতে লাভ হবে দেশের... দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। আমার এই লেখা অনেকের কাছেই হয়ত হাস্যকর মনে হবে। কিন্তু একবার চেষ্টা করে দেখেন আমরা সবাই যদি আমাদের প্রতিদিনকার ব্যবহারের একটি করে বিদেশী কোম্পানির পণ্য ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে আমাদের দেশীয় কোম্পানির পণ্য ব্যবহার করি, তবে বিদেশী কোম্পানির তবে ১৬ কোটি জনগণের জন্য বাজার হারাবে বিদেশী কোম্পানিগুলো, তার বিপরীতে ১৬ কোটি জনগণের জন্য ঐ পণ্যের বাজার পাবে দেশীয় কোম্পানি, দ্বিমুখী প্রভাব।
কিন্তু স্বপ্নতো স্বপনই থেকে যায়, তাই না? যাই হোক, আমি কিন্তু আজ থেকেই চেষ্টা করব, নিজের ব্যবহারের সব জিনিষ ধীরে ধীরে দেশীয় পণ্যের করে দিতে। তাতে কে লাভবান হচ্ছে তা আমার জানার দরকার নেই, আমি জানি দেশীয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাভবান হচ্ছে। ঠিক এই মুহূর্তে আমি যে পরিবর্তনগুলো করতে পারি তা হলাঃ
- টুথপেস্ট
- সাবান
- চা
- তেল
- শেভিং ক্রিম
- স্যান্ডেল
- নুডুলস
- সফট ড্রিঙ্কস
- মোবাইল সিম
- প্রিন্টারের কাগজ
- কলম
- জামা কাপড়
এই মুহূর্তে আর কিছু মনে পড়ছে না, তবে আমার এই পাগলামির সাথে আর যারা যারা যোগ দিতে চান, কোন কিছু আরও যোগ করার থাকলে মনে করিয়ে দিতে পারেন। সবার কাছে অনুরোধ,আপনার প্রতি দিনকার ব্যবহার্য একটি বিদেশী পণ্য পরিবর্তন করুন দেশীয় পণ্য দিয়ে। অন্তত একটি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, এগিয়ে যাই সুন্দর আগামীর পাণে...
হয়ত কোন স্বপ্ন দেখছি রাতের বেলা, ঘুমের ঘোরে। ঘুম ভেঙ্গে গেলেই সব হাস্যকর মনে হবে... কিন্তু স্বপ্নওতো অনেক সময় সত্য হয়ে যায়... কি হয় না?
No comments